প্রিন্ট এর তারিখঃ Nov 9, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Nov 2, 2025 ইং
গণপূর্তের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

বরিশাল খবর অনলাইন নিউজ : গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল (ই/এম) সার্কেল-৩, ঢাকার
তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন ও
সরকারি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা জানাচ্ছেন, সরকারি
প্রকল্পে প্রভাব খাটিয়ে তিনি শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সরকারি
চাকরিজীবনের সঙ্গে তার সম্পদের বৈধতার মধ্যে স্পষ্ট অসমতা লক্ষ্য করা
যাচ্ছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাহবুবুর রহমান রাজধানীর ১/১৪ ইকবাল রোডে প্রায়
৩৫০০ বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক। এছাড়া কলাপাড়া
রেস্টুরেন্টের বিপরীতে ৬০ ফুট রাস্তার মাথায় চারতলা একটি ভবন এবং আমুলিয়া
হাউজিং এলাকায় প্রায় ১৫ বিঘা জমি তাঁর নামে আছে।
অভিযোগকারীরা বলছেন, “এই সম্পদ বৈধ আয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা গেলে
সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সরকারি চাকরির আয়ের হিসাব অনুযায়ী এত সম্পদ অর্জন সম্ভব
নয়।” তারা আরও জানিয়েছেন, সরকারি প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে এই সম্পদ অর্জন
করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলোও এই অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দিতে
চায়। সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ই/এম সার্কেল-৩-এর আওতাধীন বিভিন্ন টেন্ডার ও
ক্রয়প্রক্রিয়ায় মাহবুবুর রহমানের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। তিনি ঘনিষ্ঠ
ঠিকাদারদের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)-এর একটি প্রকল্পে মাহবুবুর রহমানের
নিয়োগের সুযোগে তিনি ১৭ কোটি ৮ লাখ ৮৩ হাজার একশত চুয়াল্লিশ টাকার প্রকল্পে
অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের বিল পরিশোধ,
সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং কাজের মান নিয়ন্ত্রণে অনিয়মের প্রমাণও
অভিযোগে উল্লেখ আছে।
একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, ঠিকাদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে অর্থের বড় অংশ
ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন
সূত্রে শোনা যাচ্ছে, তবে এটি এবার প্রমাণভিত্তিকভাবে সাংবাদিক প্রতিবেদনে
উঠে এসেছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, মাহবুবুর রহমান ই/এম
সার্কেল-৩-এর আওতাধীন টেন্ডার ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় সরাসরি প্রভাব খাটিয়ে
আসছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, যন্ত্রপাতি
ক্রয় ও সরবরাহে কারসাজি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তদন্ত করে
ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সরকারি সম্পদ ও প্রকল্পে অনিয়ম হলে তা তদন্তের আওতায়
আনা হবে।” দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান,
“সরকারি কর্মকর্তার আয়-ব্যয়ের বৈষম্য থাকলে আমাদের নজরে আসে। প্রাথমিক
যাচাইয়ের পর প্রমাণ পাওয়া গেলে তদন্ত শুরু হয়। তারপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা
নেওয়া হয়।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন সার্কেলে ঘুষ, কমিশন
বাণিজ্য ও প্রকল্পভিত্তিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রায় নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে ই/এম সার্কেলগুলোতে যন্ত্রপাতি ক্রয়, মেরামত ও সরবরাহ কাজে
অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে
সাংবাদিকদের বলেন, “সার্কেলগুলোতে এমন অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলছে। প্রভাবশালী
কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে টেন্ডার পাইয়ে দেন এবং সরকারি
অর্থ আত্মসাৎ করেন।”
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)-এর প্রকল্পে কারসাজি, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও
বিল পরিশোধে অনিয়মের অভিযোগগুলো বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন, এ ধরনের প্রক্রিয়ায় সরকারি অর্থের বড় অংশ ব্যক্তিগত ব্যবহারে চলে যায়
এবং প্রকল্পের মানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এক অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা বলেন, “প্রকল্পের ব্যয় এবং কাজের মান ঠিকভাবে
যাচাই না করলে সরকারি অর্থ নষ্ট হয়। কর্মকর্তাদের প্রভাবশালী ভূমিকা থাকলে
সমস্যা আরও বেড়ে যায়।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলে তা
নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা জরুরি। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে কোনো সিদ্ধান্ত
নেওয়া হলে দুর্নীতি সংস্কৃতি অব্যাহত থাকে।
অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে দুদক তদন্ত শুরু করতে পারে। প্রমাণের
ভিত্তিতে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর
মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সামাজিক
প্রভাবও কম নয়। সাধারণ মানুষ মনে করেন, সরকারি প্রকল্পের টাকা অনিয়মে চলে
গেলে জনগণের উন্নয়ন ও সেবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ-অস্বাভাবিকতা ও
প্রকল্পে অনিয়ম শুধুমাত্র প্রশাসনিক সমস্যা নয়; এটি দেশের অর্থনৈতিক ও
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি।
যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দুর্নীতি আরও বাড়বে।” বিশ্বব্যাপী
দেখা গেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ যাচাই ও প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত
করতে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দুর্নীতি কমে। বিভিন্ন দেশে আর্থিক অডিট,
স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়া ও সম্পদের স্বচ্ছতা আইন কার্যকর করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশেও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ যাচাই, প্রকল্প
নিরীক্ষা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অনুরূপ পদক্ষেপ প্রয়োজন। এতে সরকারি
অর্থের অপচয় কমবে এবং জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠা
অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর। বিপুল সম্পদ অর্জন, সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম এবং
ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ-সব মিলিয়ে এটি কেবল ব্যক্তিগত নয়, সরকারি
প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার জন্যও চ্যালেঞ্জ।
অভিযোগ যাচাই ও তদন্ত নিশ্চিত করার মাধ্যমে সরকার ও দুদককে স্বচ্ছতা বজায়
রাখতে হবে। একই সঙ্গে, এ ধরনের অনুসন্ধানধর্মী প্রতিবেদনের মাধ্যমে জনগণও
জানতে পারবে তাদের করের টাকা কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে এবং কোন পর্যায়ে
দুর্নীতি হচ্ছে।
সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী
বরিশাল খবর অফিস: সিএন্ডবি রোড, বরিশাল
ইমেইল:
nomanibsl@gmail.com
মোবাইল: 01713799669 / 01712596354
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি
© বরিশাল খবর সর্বস্ব সংরক্ষিত